বান্দরবান শহর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে, বালাঘাটা এলাকার নৈসর্গিক পরিবেশে সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে স্বর্ণমন্দির, যা স্থানীয়ভাবে বুদ্ধ ধাতু জাদি নামে পরিচিত। এটি কেবল একটি উপাসনালয়ই নয়, বরং বাংলাদেশের অন্যতম আকর্ষণীয় এবং দর্শনীয় বৌদ্ধ মন্দির, যা তার চমৎকার স্থাপত্যশৈলী ও সোনালি আভার জন্য দূর থেকেই পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
স্বর্ণমন্দির মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের বৌদ্ধ স্থাপত্যকলার এক অনবদ্য নিদর্শন। এর নির্মাণশৈলীতে ফুটে উঠেছে সূক্ষ্ম কারুকার্য এবং জটিল নকশার এক অসাধারণ সমন্বয়, যা দর্শনার্থীদের মুগ্ধ করে তোলে। মন্দিরের ছাদ থেকে শুরু করে দেয়াল পর্যন্ত প্রতিটি অংশই সোনালি রঙে মোড়া, যা সূর্যের আলোয় ঝলমল করে এক জাদুকরি আভা তৈরি করে। মন্দির প্রাঙ্গণে ছোট ছোট প্যাগোডা এবং বুদ্ধের বিভিন্ন ভঙ্গিমার অসংখ্য ছোট-বড় প্রতিমা রয়েছে, যা এর আধ্যাত্মিক পরিবেশকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
মন্দিরের প্রধান উপাসনালয়ে ভগবান বুদ্ধের একাধিক বিশাল প্রতিমা স্থাপন করা হয়েছে, যা ভক্তদের জন্য এক পবিত্র ও শান্তিময় স্থান। এখানে নিয়মিত ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালিত হয় এবং ভক্তরা দেশ-বিদেশ থেকে এখানে প্রার্থনা ও শান্তি লাভের আশায় আসেন। মন্দিরের পবিত্রতা এবং নীরবতা এক আধ্যাত্মিক অনুভূতি প্রদান করে।
স্বর্ণমন্দির একটি ছোট পাহাড়ের উপরে অবস্থিত হওয়ায়, এর প্রাঙ্গণ থেকে চারপাশের সবুজ পাহাড় এবং নির্মল প্রকৃতির এক মনোরম দৃশ্য উপভোগ করা যায়। বিশেষ করে ভোরের আলোয় বা গোধূলিবেলায় মন্দিরের সোনালি আভা এবং চারপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এক অবিস্মরণীয় দৃশ্যের সৃষ্টি করে। মন্দিরের উঁচু অবস্থান থেকে বান্দরবান শহরের কিছুটা অংশও দেখা যায়।
স্বর্ণমন্দির কেবল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি পবিত্র স্থান নয়, এটি সকল ধর্ম, বর্ণ ও গোত্রের মানুষের জন্য একটি শান্তিময় আশ্রয় এবং স্থাপত্যপ্রেমীদের জন্য এক অসাধারণ আকর্ষণ। বৌদ্ধ পূর্ণিমাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবে এখানে ভক্তদের এবং পর্যটকদের ঢল নামে। মন্দির পরিদর্শনের সময় এর পবিত্রতা, শান্ত পরিবেশ বজায় রাখা এবং ধর্মীয় রীতি-নীতিকে সম্মান জানানো জরুরি। যারা ধর্মীয় স্থাপত্য, ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং নিরিবিলি পরিবেশে প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে চান, তাদের জন্য স্বর্ণমন্দির বান্দরবান ভ্রমণের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।
