টোকিও, ৫ আগস্ট, ২০২৫ – মার্কিন ডলারের বিপরীতে জাপানি ইয়েনের অব্যাহত দুর্বলতা দেশটিতে আমদানি করা খাদ্যদ্রব্যের দাম দ্রুত বাড়িয়ে দিচ্ছে। এর ফলে সাধারণ জাপানি পরিবারগুলোর ওপর জীবনযাত্রার খরচ সামলানোর চাপ তীব্র হচ্ছে। বিশেষ করে, তেল, মাংস এবং শস্যের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের বাজেটের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে।
এই মূল্যবৃদ্ধির মূল কারণ হলো জাপানের মুদ্রা ইয়েনের দুর্বল হয়ে পড়া। জাপান তার প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের একটি বড় অংশ বিদেশ থেকে আমদানি করে। যখন ইয়েন দুর্বল হয়, তখন একই পরিমাণ আমদানি করা পণ্যের জন্য বেশি ইয়েন খরচ করতে হয়। ফলে পণ্যগুলোর খুচরা মূল্য বেড়ে যায়। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা গরুর মাংস বা অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা গমের দাম এখন অনেক বেশি। একজন অর্থনৈতিক বিশ্লেষক বলেছেন, “ইয়েনের এই দুর্বলতা জাপানের আমদানিভিত্তিক অর্থনীতির জন্য একটি বড় আঘাত।”
দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ব্যাংক অফ জাপান, দীর্ঘদিন ধরে দেশের অর্থনীতিকে চাঙা রাখতে একটি শিথিল মুদ্রানীতি অনুসরণ করে আসছে। এই নীতির কারণে ইয়েন দুর্বল হয়েছে, যা জাপানের রপ্তানিমুখী কোম্পানিগুলোর জন্য লাভজনক। কারণ, দুর্বল ইয়েনের কারণে বিদেশে জাপানি পণ্য বিক্রি করা সহজ হয়। কিন্তু এর নেতিবাচক দিক হলো, মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যাওয়া। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি একটি জরুরি বৈঠক করেছে। তবে ব্যাংকটি এখনো সুদের হার বাড়ানোর মতো কঠোর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, কারণ এতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে জাপানের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। অনেক পরিবার এখন তাদের কেনাকাটার অভ্যাস পরিবর্তন করছে। তারা কম দামের বিকল্প পণ্য খুঁজছে, কম পরিমাণে কিনছে এবং বাইরে খাওয়া কমিয়ে দিচ্ছে। টোকিওর এক গৃহিণী বলেন, “সবকিছুর দাম বেড়ে যাচ্ছে। আগে যেখানে সপ্তাহের বাজার এক হাজার ইয়েনে হয়ে যেত, এখন সেখানে এক হাজার তিনশ ইয়েনের বেশি লাগছে। আমাদের এখন খুব হিসাব করে চলতে হচ্ছে।”
খাদ্যদ্রব্যের এই মূল্যবৃদ্ধি শুধু ভোক্তাদেরই নয়, রেস্তোরাঁ এবং সুপারমার্কেটগুলোর জন্যও সমস্যা সৃষ্টি করছে। তাদের হয় বর্ধিত খরচ নিজেরা বহন করতে হচ্ছে (যার ফলে লাভ কমে যাচ্ছে) অথবা ভোক্তাদের ওপর সেই বোঝা চাপিয়ে দিতে হচ্ছে (যার কারণে ক্রেতা হারানোর ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে)। এমন পরিস্থিতিতে জাপান সরকার মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ভর্তুকি বা করছাড়ের মতো কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে, যাতে সাধারণ মানুষ কিছুটা স্বস্তি পায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জাপানের অর্থনীতি এখন একটি উভয়সংকটের মধ্যে রয়েছে। একদিকে, রপ্তানিমুখী কোম্পানিগুলোকে চাঙ্গা রাখতে ইয়েনকে দুর্বল রাখতে হচ্ছে। অন্যদিকে, মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের জীবন কঠিন হয়ে উঠছে। এই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক নীতির প্রয়োজন, যা জাপানের নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।